Q 1: এই মহাবিশ্ব কি নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে — নাকি এক মহান স্রষ্টা আছেন এর পেছনে?

Creation of Universe

আজকের যুগে একটা সাধারণ প্রশ্ন শোনা যায়:

“যদি সবকিছুই বিগ ব্যাং (Big Bang) আর প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ্‌ বা কোনো স্রষ্টার দরকার কী?”

এই প্রশ্নকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং চিন্তা ও প্রমাণের আলোকে দেখা উচিত — যেখানে আধুনিক বিজ্ঞান এবং কুরআনের আয়াত একসাথে আমাদের পথ দেখায়।


✅ ১. বিজ্ঞান ‘কিভাবে’ ঘটেছে বলে — কিন্তু ‘কেন’ তা নয়

বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে:

  • কিভাবে গ্রহ-নক্ষত্র তৈরি হয়,

  • কিভাবে প্রাণীজগৎ বিকশিত হয়েছে,

  • কীভাবে প্রকৃতির নিয়মে সবকিছু চলে।

কিন্তু বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে না:

  • সবকিছুর উদ্দেশ্য কী?

  • এই সব নিয়ম কে নির্ধারণ করেছে?

  • জীবনের মানে কী?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মেলে তখনই, যখন আমরা স্বীকার করি: এই মহাবিশ্বের একজন চেতন স্রষ্টা আছেন।


✅ ২. বিগ ব্যাং-এর মানে হল শুরু — আর শুরু মানেই একজন সূচনাকারী

বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে।
যা কিছু শুরু হয়, তার একটা কারণ থাকতেই হয়।

📖 কুরআন বলছে:

“অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশ ও পৃথিবী একসাথে ছিল, তারপর আমি তাদের আলাদা করেছি?”
(সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৩০)

১৪০০ বছর আগে বলা এই বক্তব্য, আজকের বিজ্ঞান যা বলছে, তার সঙ্গে অবাক করা মিল।


✅ ৩. মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে — কুরআন তা আগেই বলেছে

আজ বিজ্ঞান জানিয়েছে, মহাবিশ্ব এখনো প্রসারিত হচ্ছে।
কিন্তু কুরআনে আগেই বলা হয়েছে:

“আমি শক্তি দিয়ে আকাশ গঠন করেছি এবং আমরা তা সম্প্রসারিত করে চলেছি।”
(সূরা আয-যারিয়াত ৫১:৪৭)

এটা কোনো সাধারণ জ্ঞান নয় — এটা এমন এক তথ্য, যা নবী মুহাম্মদ ﷺ নিজের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। এটা প্রমাণ করে, এটা আল্লাহর ওহী।


✅ ৪. মহাবিশ্বে কোনো ভুল নেই — সব কিছু নিখুঁত পরিকল্পনায় চলছে

আজকের বিজ্ঞান বলছে, মহাবিশ্ব অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সাজানো:

  • যদি কণিকা বা শক্তির মাত্রা সামান্য হেরফের হতো, জীবন সম্ভব হতো না।

📖 কুরআনে বলা হয়েছে:

“তুমি দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো অসমতা দেখতে পাবে না। আবার তাকাও, কোনো ফাঁক দেখতে পাও?”
(সূরা আল-মুলক ৬৭:৩)

এটা বোঝায়, এই পৃথিবী ও আকাশ কেবল কাকতালীয়ভাবে সৃষ্টি হয়নি — এটা পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি হয়েছে।


✅ ৫. মানুষ কি বানর থেকে এসেছে? তাহলে বানর আজও আছে কেন?

অনেকে বলেন:

“মানুষ তো বিবর্তনের মাধ্যমে বানর থেকে এসেছে, তাহলে বানর আজও আছে কেন?”

বিজ্ঞান বলে, মানুষ ও বানরের একই পূর্ব-পুরুষ ছিল — কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে:

  • চেতন, বিবেক, নৈতিকতা, আত্মা—এই গুণগুলো কিভাবে এলো?

  • যদি আমরা শুধু উন্নত প্রাণী হতাম, তাহলে আত্মত্যাগ, ভালোবাসা, নৈতিকতা কোথা থেকে এলো?

📖 কুরআন জানায়:

“আমি মানুষকে উত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছি।”
(সূরা আত-তীন ৯৫:৪)

এই গুণগুলো প্রমাণ করে, মানুষ শুধু প্রাণী নয় — বরং এক সম্মানিত ও বিশেষ সৃষ্টি


✅ ৬. সব জীবনের মূলে পানি — কিন্তু পানি এল কোথা থেকে?

বিজ্ঞান স্বীকার করে, জীবনের জন্য পানি অপরিহার্য।

📖 কুরআন বলে:

“আমি সমস্ত জীবন্ত জিনিস সৃষ্টি করেছি পানি থেকে।”
(সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৩০)

কিন্তু প্রশ্ন হল, যখন কিছুই ছিল না — তখন পানি এল কোথা থেকে?

📖 কুরআনে বলা হয়েছে:

“আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর।”
(সূরা হুদ ১১:৭)

আর হাদীসে আছে:

“শুরুতে আল্লাহ্‌ ছিলেন, আর কিছুই ছিল না…” (সহীহ বুখারী)

অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ নিজে পানি, কুরআন, কলম এবং সবকিছু সৃষ্টি করেছেন নিজের ইচ্ছায়।


✅ ৭. আল্লাহ্‌ প্রথম কী সৃষ্টি করেছেন? — কলম (Qalam)

হাদীসে বলা হয়েছে:

“আল্লাহ্‌ প্রথম কলম সৃষ্টি করলেন, এবং বললেন: লিখ।” (তিরমিযি)

এটা প্রমাণ করে, সৃষ্টির পেছনে উদ্দেশ্য ও জ্ঞান ছিল — এটা কোনো দৈব ব্যাপার নয়।


🧠 উপসংহার: বিজ্ঞান ও বিশ্বাস একে অপরের বিরোধী নয় — বরং পরিপূরক

  • বিজ্ঞান বলে কীভাবে কিছু হয়েছে

  • ঈমান বলে কেন হয়েছে

আজ যা কিছু বিজ্ঞান আবিষ্কার করছে, কুরআন তা অনেক আগেই বলেছে —
এটা প্রমাণ করে, এই মহাবিশ্ব নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি। এর একজন স্রষ্টা রয়েছেন — যিনি আল্লাহ্‌।

📖

“আল্লাহ্‌ সব কিছুর স্রষ্টা, তিনি মাপে মাপে সবকিছু নির্ধারণ করেছেন।”
(সূরা ত্বা-হা ২০:৫০)


এই মহাবিশ্ব যদি নিখুঁত পরিকল্পনায় চলতে পারে — তাহলে কি এর কোনো পরিকল্পনাকারী নেই?

অবশ্যই আছেন — আর তিনি হচ্ছেন, আল্লাহ্‌ — রব্বুল আলামিন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।